হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার কার্যাবলি ও উদ্দেশ্য

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা | NCTB BOOK

হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ পরিকল্পনা এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স বিভাগ বর্তমান কর্মী সংক্রান্ত সব তথ্য ধারণ এবং ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করে। সঠিক হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব নয়। নিচে এর উদ্দেশ্যগুলো বর্ণনা করা হলো-

→ ভবিষ্যৎ দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা ( Assumption of future skill) : পরিবর্তিত ব্যবসায়িক পরিস্থিতিতে নতুন ধরনের দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর প্রয়োজন হয়। এসব কর্মীর দক্ষতার বৈশিষ্ট্য কী হবে, কী পরিমাণ লোকবল দরকার হবে তা হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার মাধ্যমে ধারণা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান অলনাইনে প্রচারণা চালাতে চায়। তাদের কী পরিমাণ পারদর্শী লোক (যেমন : সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, অপারেটর) দরকার হবে তা হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার মাধ্যমে ঠিক করা হয় ।

→ হিউম্যান রিসোর্সের কাম্য ব্যবহার (Optimum utilization of human resource) : প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্মীদের দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য যথার্থ হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। কর্মীদের সর্বোচ্চ দক্ষতা কাজে লাগাতে হলে দরকার তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন। সঠিকভাবে কর্মীদের মূল্যায়ন করা হলেই কেবল তাদের শ্রমের সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হবে। আর হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার দ্বারাই এটি সম্ভব হয়।

→ হিউম্যান রিসোর্সের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা (To ensure availability of human resource) : প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স নিয়ে পরিকল্পনা থাকলে হিউম্যান রিসোর্সের প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে নতুন হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ করা যায়। আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত হিউম্যান রিসোর্স থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত জনবলের বোঝা টানতে হয়; বাড়তি খরচও গুণতে হয়। আবার কর্মী সংকট হলেও উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

→ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ (To control cost) : প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে খরচ একটি মুখ্য বিষয়। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উদ্দেশ্য ভেস্তে যায় শুধু অপরিকল্পিত খরচের কারণে। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে খাতওয়ারি খরচ বরাদ্দ করা দরকার। আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি রেখে মুনাফা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই খরচ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

→ হিউম্যান রিসোর্সের যোগ্যতা নির্ধারণ (To specify the qualification of human resource ) : হিউম্যান রিসোর্সের যোগ্যতা নির্ধারণে পরিকল্পনা প্রয়োজন। যেমন : কীভাবে সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী চিহ্নিত করা যায়, তাদের যোগ্যতার মাপকাঠি কী, তাদের দিয়ে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন সম্ভব কিনা— এসবই হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনায় নির্ণয় করা হয়।

→ প্রশিক্ষণ চাহিদা নির্ধারণ (To determine of training need): কাজের বিভিন্ন স্তরে হিউম্যান রিসোর্সের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মীর কাজের কোন স্তরে কী প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তার নকশা প্রণয়ন করা হয়। সাধারণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ এক রকম হয়ে থাকে, নির্বাহীদের প্রশিক্ষণ অন্য রকম হয়ে থাকে। সুপরিকল্পিতভাবে এসব কাজ করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা যায় না।

→ পদোন্নতির নীতিমালা প্রণয়ন (To formulate promotion policies) : প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে এবং কর্মীদের মূল্যায়নের লক্ষ্যে তাদের বদলি ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হয়। হিউম্যান রিসোর্সের জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কীভাবে তাদের বদলি ও পদোন্নতি দেওয়া হবে; আবার কেউ শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলে কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার সবই হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।

চিত্র : যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি

→ কর্মীদের কাজের পরিপক্কতার সময় নির্ধারণ (To calculate the time required for work force to start work) : হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষানবিশ ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা কতদিনের মধ্যে কাজের জন্য উপযুক্ত হবে তার সময়ভিত্তিক নকশা প্রণয়ন করা হয়। ধারাবাহিকভাবে কর্মীর যোগ্যতা ও মান উন্নয়ন করে যথাসময়ে কর্মীদের কাজে নিয়োগ দিতে পারলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। 

   তাই বলা যায়, হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার মাধ্যমে উপরিউক্ত উদ্দেশ্যগুলো অর্জনের চেষ্টা করা হয়। আর এই উদ্দেশ্যগুলো প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

🔳 হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য (Features of Human Resource Planning )

হিউম্যান রিসোর্স (মানবসম্পদ) ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হলো হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ পরিকল্পনা। এর ওপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থা বিশ্লেষণ করে পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরিকল্পনাই হলো হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা। হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার বিশেষ কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে এসব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো-

▪️চাহিদার পূর্বানুমান (Forecasting needs) : পরিকল্পনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো চাহিদার পূর্বানুমান। ভবিষ্যতে কী পরিমাণ কর্মী প্রয়োজন তার ওপর ভিত্তি করেই হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। আর এর ভিত্তিতেই জনশক্তি নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

▪️খরচ নির্ধারণ (Determining cost) : হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ করার জন্য অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হবে তা পরিকল্পনায় উল্লেখ করা থাকে। এই পরিকল্পনার সব কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে ও স্বল্প খরচে করা যায় তার নির্দেশিকা উল্লেখ করা থাকে।

▪️প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উদ্দেশ্য বা মিশন (Overall purpose or mission) : প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক উদ্দেশ্য বা মিশন নির্ধারণ করা হয়। আর হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনাও এই উদ্দেশ্যের ভিত্তিতেই প্রণয়ন করতে হয়। তাই বলা যায়, মিশন হলো এই পরিকল্পনার ভিত্তি।

▪️পরিকল্পনার বাস্তবায়ন (Implementation of plan) : হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনায় প্রতিষ্ঠানের মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জনশক্তির চাহিদা পূরণের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা থাকে। ফলে প্রতিষ্ঠানের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।

▪️প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য (Organizational goal) : যেকোনো পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত থাকে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি ও বিস্তৃত উদ্দেশ্য অর্জনের পরিকল্পনা। আর হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা এটি অর্জনে সাহায্য করে।

▪️হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ ও উন্নয়ন (Recruitment and development of human resource ) : প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে কী পরিমাণ জনশক্তি সংগ্রহ, প্রয়োজন এবং তাদের উন্নয়নের জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনায় উল্লেখ করা থাকে। এসব বিষয়ের ভিত্তিতে জনশক্তি সংগ্রহ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

চিত্র: হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ

▪️প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি ও পরিবেশ (Organizational culture and environment) : হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি ও পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। উচ্চপদস্থ নির্বাহীগণ প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের সংস্কৃতি ও পরিবেশ চায় তার ওপর হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার সংস্কৃতি ও পরিবেশ নির্ভর করে।

▪️সময় ও স্থান নির্বাচন (Selection of time and place ) : হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের কোন সময়ে, কোন স্থানে, কী পরিমাণ হিউম্যান রিসোর্স প্রয়োজন হবে তা উল্লেখ থাকে। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক সময় ও স্থান থেকে কর্মী সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা হয়।

▪️হিউম্যান রিসোর্সের যোগ্যতা নিরূপণ (Determining the qualifications of human resource ) : হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনায় ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ বা কী ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন হিউম্যান রিসোর্স প্রয়োজন হবে তা উল্লেখ করা থাকে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি সহজেই যোগ্যতাসম্পন্ন হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ করতে পারে।

▪️সাংগঠনিক পরিকল্পনা (Organizational planning) : প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক পরিকল্পনা হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করে। তাই হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনাকে সাংগঠনিক পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।

▪️ মূল্যায়ন (Evaluation) : হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ পরিকল্পনার কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য হিউম্যান রিসোর্স মূল্যায়ন আবশ্যক। এর মাধ্যমে পরিকল্পনার ত্রুটি-বিচ্যুতি বের করা যায় এবং তা দূরীকরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয় ।

পরিশেষে বলা যায়, হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার ওপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে। একটি পরিপূর্ণ হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনায় উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা জরুরি। আর এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে ব্যবস্থাপকীয় সফলতা অর্জন সহজ হবে।

🔳 হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার পদ্ধতি ও ধাপসমূহ (Methods and Steps of Human Resource Planning)

হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার পদ্ধতি (Methods of Human Resource Planning )

হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ পরিকল্পনা হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ কর্মী চাহিদা অনুসারে সুবিধাজনক উৎস থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মসূচির সমন্বিত রূপ। হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ পরিকল্পনা পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

ক. স্বল্পকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা পদ্ধতি এবং

খ. দীর্ঘকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা পদ্ধতি ।

নিচে এগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো—

চিত্র: হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা পদ্ধতি

ক. স্বল্পকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা পদ্ধতি (Methods of short term human resource planning:) স্বল্পকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা পদ্ধতি বিশেষ প্রকল্প বা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত হিউম্যান রিসোর্সের বর্তমান কাজের সাথে মিলকরণের বিষয়টি এর অন্তর্ভুক্ত। স্বল্পকালীন পরিকল্পনা দ্বারা কর্মরত হিউম্যান রিসোর্সের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়। যখন হিউম্যান রিসোর্সের কাজ পরিমাপ করা যায় না তখন সমস্যা সমাধানে তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যথা :

১. কাজ পরিবর্তন ( Change of job): কাজ পরিবর্তন করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামোর সংশোধন করা যায়। কাজ বিকেন্দ্রীকরণ, প্রশিক্ষণ প্রভৃতির মাধ্যমে হিউম্যান রিসোর্সের দক্ষতা বাড়িয়ে, হিউম্যান রিসোর্সকে অন্যত্র সরিয়ে কাজ পরিবর্তন করা যায়।

চিত্র : কাজ পরিবর্তন

 

২. প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা (Arrangement for training): হিউম্যান রিসোর্সের কাজের জন্য উপযুক্ত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিলে তাদের কাজের উন্নতি ঘটে। তাই কাজের জন্য উপযুক্ত করে উন্নত অবস্থায় উন্নীত করা যায়।

৩. হিউম্যান রিসোর্স অপসারণ (Removal of human resource ) : নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হিউম্যান রিসোর্স কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারলে তাকে বদলি করা হয়। যদি তারপরও সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে তাকে অপসারণ করতে হয় এবং তার জায়গায় নতুন হিউম্যান রিসোর্স নিয়োগ দেওয়া হয় ।

খ. দীর্ঘকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা পদ্ধতি (Method of longterm human resource planning): দীর্ঘকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনায় সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবর্তন বিবেচনা করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। দীর্ঘকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা সাধারণত বিশ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রত্যেক হিউম্যান রিসোর্স যাতে যোগ্যতা লাভ করতে পারে সেজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও অন্য কাজে বদলি করার ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে। দীর্ঘকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা কার্যকর করতে হলে যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় সেগুলো হলো-

১. সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবেশ ও অতীত কার্যাবলি বিশ্লেষণ (Analysis of organizational environment and past activities) : প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ও তার চাহিদা, ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা, দেশের বর্তমান অবস্থা, কলাকৌশলগত উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ ও তার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

২. উদ্দেশ্য নির্ধারণ (Determination of objectives): সংগৃহীত তথ্য থেকে প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সম্প্রসারণ করা হবে নাকি সংকোচ করা হবে এই সিদ্ধান্তের ওপরই হিউম্যান রিসোর্সের পূর্বানুমান করা হয় ।

৩. চাহিদার পূর্বানুমান (Demand forecasting): বিভিন্ন বিভাগের ব্যবস্থাপকগণ তাদের বিভাগে কতজন কর্মী প্রয়োজন তা নির্ধারণ করবে। কতজন কর্মী, কোন বয়সের, কেমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দরকার বা তাদের মধ্যে কতজন পুরুষ বা কতজন মহিলা হবে তা নির্ধারণ করে কর্মী বিভাগের নিকট চিঠি পাঠাবে 1

৪. কর্মী তালিকা (Human resource inventory): কর্মী তালিকায় বর্তমান কর্মীর সংখ্যাই শুধু প্রকাশ করা হয় না; বর্তমান ও সম্ভাব্য দক্ষ কর্মীদের শ্রেণিবিন্যাসও দেখানো হয়। এরপর তালিকা তৈরিতে চারটি ধাপ রয়েছে। যথা :

i. হিউম্যান রিসোর্সের তালিকা স্থিরকরণ;

ii. হিউম্যান রিসোর্সের প্রত্যেকের অতীতের তথ্য অনুযায়ী গুণাবলি শ্রেণিবিন্যাস করা; 

iii. সেসব হিউম্যান রিসোর্সের যথাযথ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা এবং

iv. সম্ভাবনাময় হিউম্যান রিসোর্সের পর্যালোচনা।

৫. চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান (Consistency between demand and supply): প্রতিটি বিভাগে কতজন কর্মী প্রয়োজন তা স্থির করার পর বর্তমান কর্মীর পরিমাণ বেশি বা কম হলে ব্যবস্থাপকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে, যে তারা এরূপ পরিস্থিতিতে কী করবে। হিউম্যান রিসোর্স কম হলে নতুন হিউম্যান রিসোর্স নিয়োগ আবার বেশি হলে ছাঁটাই বা দ্রুত অবসরে পাঠানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

৬. প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা (Arrangement for training): যোগ্যতাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ হিউম্যান রিসোর্স নিয়োগ করা হলেও তারা সবদিক থেকে যোগ্য নাও হতে পারে। তাই কাজে যোগদান করার পর বাস্তব অবস্থার মধ্যে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেয়। কাজেই সেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করতে হলে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়।

৭. রেকর্ড সংরক্ষণ (keeping record): প্রতিষ্ঠানের বর্তমান হিউম্যান রিসোর্সের সংখ্যা, অবস্থা ও কাজের বিবরণী সম্পর্কে বিস্তৃত রেকর্ড রাখতে হবে। এসব তথ্য থেকে ব্যবস্থাপকগণ হিউম্যান রিসোর্সের পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে থাকেন।

৮. হিউম্যান রিসোর্সের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা (Future prospects of human resource): যেসব কর্মী নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে ভবিষ্যতে তাদের পদোন্নতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে হবে। এরূপ করতে গেলে প্রথমে হিউম্যান রিসোর্সের প্রত্যেকের দক্ষতা ও যোগ্যতার মান উল্লেখ করে একটি হিউম্যান রিসোর্স তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

চিত্র: ফাইল সংরক্ষণ

 

৯. কাজের মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ (Job evaluation and analysis): কাজের মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ হলো হিউম্যান রিসোর্সের কাজ সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য। এর অন্তর্ভুক্ত হলো কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, প্রয়োজনীয় ধাপ, চিহ্নিত দায়িত্ব প্রভৃতি। কাজের মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ।

১০. গৃহীত কর্মসূচি (Action program): হিউম্যান রিসোর্সের সংখ্যা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনাকে কাজে রূপ দেওয়ার মানে হলো শ্রমের যোগানের বিভিন্ন উৎস নির্ধারণ করা। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যেকোনো উৎস থেকেই হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ করা যেতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, দীর্ঘমেয়াদি না স্বল্পমেয়াদি হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা গ্রহণ করবে তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠিত নীতির ওপর। যথাযথ পদ্ধতিতে কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া এবং দীর্ঘকালীন হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনায় সঠিক উপায়ে হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ করা হলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলজনক। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটির হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

▪️হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার ধাপসমূহ (Steps of Human Resource Planning) :

হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ পরিকল্পনা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত হতে হয় সঠিক জায়গা থেকে এটি প্রণয়ন হচ্ছে কিনা এবং এই প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। এই পুরো পদ্ধতিটি মূলত হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা কৌশল। নিচে হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. পরিবেশ বিশ্লেষণ (Environmental analysis): হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হলো হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনার প্রেক্ষাপট জানা। ব্যবস্থাপকদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। প্রযুক্তি, প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক অবস্থা, শ্রমবাজার ও শ্রমনীতি, দক্ষতার প্রাপ্যতা, বেকারত্বের হার, শ্রমশক্তির বয়স ও লিঙ্গ বিভাজন প্রভৃতি বিষয় বাহ্যিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানে বর্তমান কর্মীর অবস্থা, স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।

২. হিউম্যান রিসোর্সের চাহিদা পূর্বানুমান (Forecasting human resource demand): এই ধাপে প্রতিষ্ঠানের জন্য কী পরিমাণ এবং কোন ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন হিউম্যান রিসোর্স লাগবে তার পূর্বানুমান করতে হয়। পূর্বানুমান হওয়া উচিত অতীত ও বর্তমান অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এবং ভবিষ্যতের সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে হিউম্যান রিসোর্সের চাহিদার সমন্বয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্সের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়।

৩. সরবরাহ বিশ্লেষণ (Analysing supply): প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় উৎস থেকে কর্মী সংগ্রহ করতে পারে। অভ্যন্তরীণ কর্মী সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে রাখাকে দক্ষতা মজুদ (Skill inventories) কৌশল বলা হয়। এ পদ্ধতিতে নথিপত্র বা কম্পিউটারে কর্মীদের দক্ষতা, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। চলতি সময়ে হিউম্যান রিসোর্সের ঘাটতি মেটাতে বাহ্যিক উৎস থেকে হিউম্যান রিসোর্স সরবরাহ নিয়ে পূর্বানুমান করতে হয়।

৪. সমন্বয়সাধন ও পরিকল্পনা ( Coordination and planning): হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ পরিকল্পনার সর্বশেষ ধাপ হলো প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং বিকল্প অনুসারে কর্মপরিকল্পনা (Action plan) তৈরি করা। ব্যবস্থাপনা ও হিউম্যান রিসোর্স সবার কাছেই এই পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য হতে হবে। গুরুত্ব সহকারে এই পরিকল্পনার সুবিধা ও অসুবিধা চিহ্নিত করতে হবে। মানবসম্পদ পরিকল্পনাকে আরও ছোট ছোট পরিকল্পনায় ভাগ করা যায়, যেমন- কর্মী ব্যবহার পরিকল্পনা, মূল্যায়ন পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, হিউম্যান রিসোর্স সরবরাহ পরিকল্পনা প্রভৃতি।

পরিকল্পনাকে বলা হয় ব্যবস্থাপনার সব কাজের (সংগঠন, কর্মীসংস্থান, প্রেষণা, নির্দেশনা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ) ভিত্তি। একইভাবে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাতেও মানবসম্পদ পরিকল্পনা ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তাই এই পরিকল্পনা তথ্যনির্ভর ও নির্ভুল হওয়া জরুরি।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion